আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, নবজাতকদের শরীরে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ‘বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলা: আর্চ গবেষণার ফলাফল’ শীর্ষক গবেষণার এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইসিডিডিআর,বি-এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) গবেষণা ইউনিটের প্রধান ড. ফাহমিদা চৌধুরী জানান, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ভর্তি হওয়া ৮১ শতাংশ নবজাতকের শরীরে কার্বাপেনেম প্রতিরোধী ক্ল্যাবসিয়েলা নিউমোনির (সিআর-কেপিএন) জীবাণু পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই জীবাণুটিকে একটি অগ্রাধিকার প্যাথোজেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সাধারণত, কার্বাপেনেম অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
গবেষণার মূল findings:
হাসপাতালে সংক্রমণ: গবেষণায় দেখা গেছে, এনআইসিইউতে ভর্তি হওয়া ৭০ শতাংশেরও বেশি নবজাতক ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় হাসপাতালে থাকার পর সিআর-কেপিএন দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে, যা হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ ঝুঁকির বিষয়টি নিশ্চিত করে।
শিশুদের ওপর প্রভাব: প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর জীবনে প্রথম বছরের মধ্যেই সিআরই (Carbapenem-Resistant Enterobacteriaceae) এবং প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যে ইএসসিআরইই (Extended-Spectrum Cephalosporin-Resistant Enterobacteriaceae) কলোনাইজেশন ছিল। যেসব শিশু জন্মের পর ৭২ ঘণ্টার বেশি হাসপাতালে ছিল, তাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার: এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৮০ শতাংশেরও বেশি শিশু অন্তত একবার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে, যা তাদের শরীরের স্বাভাবিক জীবাণুর উপস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
কাদের জন্য গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল?
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং দ্য টাস্ক ফোর্স ফর গ্লোবাল হেলথের (টিএফজিএইচ) অর্থায়নে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল ইউনিটের সহায়তায় এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণাটির দ্বিতীয় পর্যায়ে সংকটাপন্ন রোগী, নবজাতক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর এএমআরের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মা ও শিশুর মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া এবং এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বোঝার জন্য তাদের ওপর এক বছর বয়স পর্যন্ত গবেষণা পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএস সিডিসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস্টার ব্রায়ান হুইলার, আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ সায়িদুল হক এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী।